বাংলাদেশের নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর জীবনধারা, ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস বিষয়ে গবেষণা এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে “রাজশাহী বিভাগীয় শহরে উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী, খাগড়াছড়ি উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইন্সষ্টিটিউট এবং মৌলভীবাজার মনিপুরী ললিতকলা একাডেমী স্থাপন” শীর্ষক শিরোনামে তিনটি উপজাতীয় ইনষ্টিটিউট/একাডেমী নির্মাণ প্রকল্প জুলাই, ১৯৯৫ সালে শুরু হয়ে ডিসেম্বর, ২০০৩ এ সমাপ্ত হয়। প্রকল্পটি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর নিয়ন্ত্রনে বাস্তবায়িত হওয়ার পর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হয় ২০০৪ সালে।
রাজশাহী বিভাগীয় শহরে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নির্মিত ‘রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমীটি রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে মোল্লাপাড়া নামক স্থানে অবস্থিত। একাডেমীর চারিপাশে বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী/আদিবাসী পাড়া রয়েছে। তাছাড়া বিভাগীয় একাডেমী হওয়ার কারণে একাডেমীর বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সেমিনার, মেলা ও উৎসবে রাজশাহী বিভাগের মোট ৮ (আট) টি জেলা থেকেই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ থাকে। ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন’- ২০১০-এর প্রেক্ষিতে রাজশাহী বিভাগের মাননীয় বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে গঠিত ১০ (দশ) সদস্যের একটি নির্বাহী পরিষদের মাধ্যমে একাডেমীর সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে ঋতু বৈচিত্রের মতই বৈচিত্রময় এদেশের মানুষ, তাদের সংস্কৃতি। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাঙ্গালী, কিন্তুু তাদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক জাতি রয়েছে অনেকগুলো।, নৃত্বাত্তিক জাতিসত্তার সংখ্যা প্রায় ৫০ টি। এর মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে ২১টি ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক জাতির বসবাস রয়েছে। এসব জাতির মানুষ যুগ যুগ ধরে মূলধারার মানুষের সাথে পাশাপাশি বাস করছে এদেশে । তাদের বর্ণময়, বর্নাঢ্য সংস্কৃতি সমৃদ্ধ করেছে এদেশের সংস্কৃতিকে। বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির বিকাশে এই জাতিসত্তার সংস্কৃতির অবদান রয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করি, সরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিত এই একাডেমীর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যলেঞ্জ হলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা। বিশেষত: বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে যেসব সাংস্কৃতিক উপাদান্, সেগুলোকে চর্চা ও সংরক্ষণ করা। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সাথে মূলধারার মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্র নির্মাণ করা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি সুরক্ষায় সার্বিক সহযোগিতা ও উৎসাহ প্রদান এবং বিষয়ভিত্তিক নানাবিধ গবেষনা, প্রকাশনা, প্রদর্শনী ও প্রচারের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও প্রসারে ভূমিকা পালন করা।